শিশু নির্যাতন রক্ষা ও তার প্রতিকার

 
আজকের শিশু হচ্ছে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের উন্নতি। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো প্রতিনিয়ত বহু শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কথাটা দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তব।



এই নির্যাতন শুধু শারীরিক নয়, মানসি্‌ক, যৌন,সামাজিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে হচ্ছে। আমরা আজকেই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো যে শিশু নির্যাতন কী, এবং ধরণ কী, কারণ কী, প্রভাব কী এবংবিশেষভাবে এর রক্ষা ও  প্রতিকার কিভাবে করা যাই।

সূচিপত্র


শিশু নির্যাতন কি?


শিশু নির্যাতন বলতে আমরা বুঝি যে, শিশুদের শারীরিক, মানসিক, যৌন,অথবা অবহেলার মাধ্যমে কষ্ট দেয়া। অনেক সময় এটি ঘরের মধ্যেই ঘটে, আবার অনেক সময় শিক্ষা,প্রতিষ্ঠান, এমন কি আজ কাল মসজিদের ভেতরেও ঘটে থাকে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুসারে, প্রতিটি শিশুর নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকার অধিকার আছে।



শিশু নির্যাতনের প্রকারভেদ

শিশু নির্যাতন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমনঃ

১. শারীরিক নির্যাতন- শিশুদের আঘাত করা, মারধর করা,পুড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি।
২. মানসিক নির্যাতন- ভয় দেখানো, গালি দেয়া, অপমান করা ইত্যাদি।
৩. যৌন নির্যাতন- শিশুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যৌন সংস্পর্শে বাধ্য করা, কুপ্রস্তাব দেয়া, ধর্ষণ ইত্যাদি।
৪. অবহেলা- যত্ন না নেওয়া, খাবার না দেয়্‌ শিক্ষা বা চিকিৎসা না দেয়া ইত্যাদি।
৫. শ্রম নির্যাতন- শিশুদের দিয়ে জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো ইত্যাদি।



শিশু নির্যাতনের কারণসমূহ

আজকের আধুনিক যুগে শিশু নির্যাতনের অনেকগুলো সামাজিক ও পারিবারিক কারণ রয়েছে। এর মধ্য থেকে প্রধান কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • পিতা মাতা অশিক্ষিত ও অবজ্ঞা 
  • অতিদরিদ্র ও অভাব
  • পারিবারিক অশান্তি ও ঝগড়া
  • মদ পান করা
  • সামাজিক বাধা-বিপত্তি
  • দুর্বল আইন প্রয়োগ
এই সমস্যাগুলো আগে সমাধান করতে হবে তাহলে আমরা শিশু নির্যাতন রোধ করতে পারব।

বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের চিত্র

বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। পত্রিকায় প্রতিবেদন অনুযায়ী কেবল ২০২৩ সালে প্রায় ১৫০০ এরও বেশি শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিশু মারা গেছে, এবং অনেকে আত্মহত্যা করেছে কিংবা স্থায়ীভাবে  মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। এই পরিসংখ্যান এই আমাদের সমাজের অমানবিক চিত্র তুলে ধরে।


শিশু নির্যাতনের প্রভাব

১. মানসিক সমস্যাঃ আতঙ্ক, আত্মবিশ্বাসীহীনতা।
২. শারীরিক সমস্যাঃ পঙ্গু হয়ে যাওয়া,অনেকদিন যাবত অসুস্থ থাকা।
৩. শিক্ষা থেকে ঝরে পড়াঃ নির্যাতনের কারণে অনেক শিশু স্কুল  ছাড়তে বাধ্য হয়।
৪. অপরাধ প্রবণতাঃ নির্যাতন শিশুরা বড় হয়ে অপরাধে ভোগতে থাকে।


শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা

পরিবার হলো একটি শিশুর প্রথম নিরাপদ আশ্রয়স্থল। শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারিবারিক পরিবেশে গড়ে ওঠা। কেননা একমাত্র পরিবারই পারে তাকে সুস্থ বিকাশে পরিপূর্ণ করতে। কারণ শিশুদের প্রতি ভালোবাসা,স্নেহ,মায়া,মমতা, সময় দেওয়া এবং তাদের মতামতের মূল্যায়ন করে পরিবারের শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সমাজের ভূমিকা

১. সচেতনতা বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন জায়গায় শিশু সুরক্ষা বিষয় কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন রাখা।

২. প্রতিবেশীদের দায়িত্বঃ আশেপাশে কোন শিশুকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখলে তা সাথে সাথে প্রতিবাদ করা এবং প্রশাসনকে জানানো।
৩. ধর্মীয় অনৈতিক শিক্ষাঃ মসজিদ গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শিশু সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

১. শিক্ষকদের সংবেদনশীলতাঃ প্রত্যেকটি শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের উচিত শিশুদের প্রতি নম্র ও ভদ্র আচরণ করা।
২. পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেবাঃ স্কুলের একজন পরামর্শদাতা রাখা।
৩. অভিভাবক সমাবেশ আলোচনাঃ শিশু নির্যাতন বিষয়ে প্রত্যেক অভিভাবককে সচেতন করা।


নির্যাতন প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার

১. মোবাইল অ্যাপসঃ শিশু নির্যাতন রিপোর্ট করার জন্য বিশেষ অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া সচেতনতাঃ ফেসবুক ইউটিউব ও টিকটেক সচেতনামূলক ভিডিও প্রচার করা।
৩. অনলাইন হেল্প ডেক্সঃ শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত পরামর্শ অভিযোগ জানানোর জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করা।

শিশু নির্যাতন রোধে আমাদের করণীয়

  • চোখ -কান খোলা রাখাঃ শিশুদের আচরণে পরিবর্তন দেখলে সতর্ক হওয়া।
  • প্রশিক্ষণ গ্রহণঃ অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য শিশু মনোবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
  • অভিযোগ জানানোঃ নির্যাতনের ঘটনা প্রশাসনকে জানানো।
  • ভালোবাসা ও যত্নঃ শিশুর আবেগ অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো।

 উপসংহার 

শিশু নির্যাতন শুধু একটি পারিবারিক সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। একটি শিশু সুস্থ ও  নিরাপদ না থাকলে, একটি জাতীয় সুস্থ ভাবে গড়ে উঠতে পারে না। তাই, পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র মিলে একটি শিশু বান্ধব সমাস গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। আসুন, সকলে মিলে শিশুর নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি।






















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মূল্যবান মতামত এখানে টাইপ করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url